বর্তমানে বাংলাদেশের সেরা ১০টি পেশা

জীবনের অগ্রগতির জন্য সঠিক প্রফেশন বাছাই করা অত্যন্ত জরুরী। পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমরা প্রায়ই এই সিদ্ধান্তটি নিতে ভুল করি। আবার অনেক সময় পরিবার চাওয়ায় নিজের অনিচ্ছায় অপছন্দের কাজটি করে যেতে হয়। তবে আজকে আমি আলোচনা করব বাংলাদেশের সেরা ১০টি পেশা এবং কোন পেশার সবচেয়ে ভালো সে বিষয়টি নিয়ে। এতে করে আপনি সঠিক পথটি বেছে নিতে পারবেন। একইভাবে বেশ ভালো অর্থ উপার্জন করে সারা জীবন নিশ্চয়তা অর্জন করতে পারবেন।

আজ থেকে ৩০ বছর আগেও মানুষের ক্যারিয়ারের পছন্দের বিষয় ছিল পুরোপুরিভাবে ভিন্নরকম। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে আর্টিফিশিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, এনিমেশন মেকিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন ইত্যাদি ক্যারিয়ার আগে ছিল না। মানুষ এই সম্পর্কে খুব বেশি ধারণাও রাখত না। খুব কম লোকজন ছিল যারা কিনা এ সকল বিষয়ের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির ফলে এখন নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। তাই সরকারি এবং বেসরকারি চাকরির বাদেও শুধুমাত্র ঘরে বসেই অনেক বড় বড় জব করে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করা যায়।

বাংলাদেশের সেরা ১০টি পেশা

আমি ধাপে ধাপে বিভিন্ন সেক্টরের বিভিন্ন সুযোগ নিয়ে আলোচনা করব। তাই নিজের জন্য কোন পেশা সবচাইতে ভালো সেটি বেছে নিতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সরকারি চাকরি

বিসিএস, প্রাইমারি, মন্ত্রণালয়, শিক্ষকতা ইত্যাদি সরকারি চাকরিতে অনেক তরুন তরুণীদের বেশ আগ্রহ রয়েছে। এর কারণ হচ্ছে ভালো বেতন অন্যান্য ভাতার সুবিধা এবং শেষ বয়সে পেনশন সুবিধা। আবার যারা কিনা সরাসরি জনগণের সেবা করতে চান তাদের ক্ষেত্রেও সরকারি চাকরিই উত্তম একটি ক্ষেত্র।

এর জন্য যথাযথ শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াও অন্যান্য শর্তাবলী পালন করতে হবে। বিশেষ করে সামরিক, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে যোগদান করার জন্য শারীরিক ভাবে সুস্থ এবং দক্ষ হতে হবে। বিসিএস কিংবা প্রথম শ্রেণীর সরকারি চাকরি করার জন্য অবশ্যই অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টসহ উত্তীর্ণ হতে হবে। একটি সরকারি চাকরি করে আপনি খুব সহজেই পরিবার প্রয়োজন নিয়ে আর্থিক স্বচ্ছলভাবে চলতে পারেন।

ডাক্তার ও চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত পেশা

বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, ডেন্টিস্ট, নিউট্রিশনিস্ট ইত্যাদির পেশাদার মানুষের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে চলেছে। তাইতো নির্ধারিত বেতনের বাইরে ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকামের সুযোগ রয়েছে ডাক্তারি ও চিকিৎসা পেশায়। বাংলাদেশের সেরা ১০ পেশার মধ্যে এটি অন্যতম। এমনকি দেশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়েও চাকরি করা যায়।

অনেকেই আবার নিজেদের চেম্বার এবং ছোটখাটো ক্লিনিক খুলে বিজনেস করেও আয় করেন এবং অন্যদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। এমবিবিএস, ডেন্টাল, নিউট্রিশনিস্ট হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য অবশ্যই এসএসসি এবং এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হতে হবে। সেই সাথে নির্ধারিত ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলেজের চান্স পেতে হবে।

ইঞ্জিনিয়ারিং পেশা

মেকানিক্যাল, কম্পিউটার, ইলেকট্রিক, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে তরুণদের বেশ আগ্রহ রয়েছে। বিশেষ করে ছেলেদের এই ধরনের পেশার প্রতি আগ্রহ অনেক বেশি। এর জন্য এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হতে হবে। বাংলাদেশের সরকারি এবং বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পাশের পরই বিভিন্ন বিষয়ের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করা যায়। পরবর্তীতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি করার সুযোগ রয়েছে।

পেশা হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং

এটি বর্তমানের আলোচিত একটি সেরা পেশা। এর মধ্যে আবার অনেক সেক্টর রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, প্রোগ্রামিং এনিমেশন, ভিডিও এডিটর, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন ইত্যাদি। যেকোনো ব্যাকগ্রাউন্ডের লেখাপড়া থেকেই ফ্রিল্যান্সিংয়ে অংশগ্রহণ করা যায়। এর জন্য শুধুমাত্র দরকার আপনার দক্ষতা। বাংলাদেশে অনেক ভালো ভালো প্রতিষ্ঠান আছে যারা কিনা বিভিন্ন ক্যাটাগরির উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এমনকি আপনি চাইলে ঘরে বসে ইউটিউব দেখেও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হতে নির্দিষ্ট স্কিলের উপর প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। বর্তমানে একজন দক্ষ ফ্রীলান্সার মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করতে পারেন।

কনটেন্ট ক্রিয়েটিং ও ইনফ্লুয়েন্সার

আপনি নিশ্চয়ই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন ইনফ্লুয়েন্সারদের দেখেছেন। যাবে কিনা ইউটিউব, ফেসবুক ইত্যাদিতে ভালো ভালো কনটেন্ট তৈরি করে এবং বিভিন্ন বিষয়ের বিজ্ঞাপন প্রদান করে। মূলত আপনাকে পরিচিত লাভ করতে গেলে অবশ্যই কনটেন্ট বানাতে হবে। এই কনটেন্ট হতে পারে ব্লগিং, এডুকেশনাল, রিভিউ ইত্যাদি। তারপর আপনার ভিডিও গুলো যখন লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখবে তখন স্পন্সর, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

আবার যখন একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর অনেক বেশি পরিচিত লাভ করে তখন ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে কাজ করেও অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারে।

গার্মেন্টস সেক্টরে ক্যারিয়ার

বুটেক্সসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন টেক্সটাইলের উপর পড়াশোনা করা যায়। গার্মেন্টসে অনেক সেক্টর রয়েছে যেমন প্রোডাকশন, এইচআর, এডমিন, স্যাম্পল, মার্চেন্ডাইজিং ইত্যাদি। তবে সেক্টর যাই হোক না কেন মোটামুটি একজন সিনিয়র ম্যানেজার বা জিএম কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকেন। আর ৭ থেকে ৮ বছরের অভিজ্ঞতাই আপনি জেনারেল ম্যানেজার হতে পারবেন। পরবর্তীতে আরও প্রমোশন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

তাইতো তরুন তরুণীরা প্রাইভেট, পাবলিক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা সম্পন্ন করে আরএমজি সেক্টরে প্রবেশ করছে। গার্মেন্টসে যাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে তারা আবার বড় বড় বায়িং হাউসে জব করে আর্থিক সচ্ছলতা আনয়ন করতে পারে। গার্মেন্টস সেক্টরে কাজের দক্ষতা এবং প্রচুর পরিশ্রম প্রয়োজন।

এনজিও প্রতিষ্ঠানে চাকরি

Non Government Organisations গুলোতে চাকুরীর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে আকর্ষণীয় বেতন এবং নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা। সাধারণত সপ্তাহে ২ দিন ছুটি, গ্র্যাচুইটি, চাকরির শেষে এককালীন অর্থ, দেশের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিং নানা ধরনের ফ্যাসিলিটিস রয়েছে। বাংলাদেশে ব্যুরো, এসএসএস, আশা সহ বিভিন্ন নামি দামি এনজিও প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে অসংখ্য মানুষ নিজের যে কাজ করে নিজের জীবিকা নির্বাহ করছে।

রাধুনী বা শেফ

সিনেমায় কিংবা টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে রান্নাবান্নার প্রতিযোগিতা নিশ্চয়ই দেখেছেন। বড় বড় হোটেল এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভালো রাধুনীর বেশ চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ বিদেশের গিয়ে শেফ রাধুনীর কাজ করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করছে। আবার ইউটিউব কিংবা ফেসবুকেও অনেক বড় বড় রাধুনীদের দেখা যায়। যাদের রয়েছে মিলিয়ন মিলিয়ন ফলোয়ার এবং অগণিত গ্রাহক।

আইনজীবী

মানুষ যখন কোন আইনি ঝামেলায় পড়ে তখন সবচাইতে জরুরী প্রয়োজন হয় একজন ভালো আইনজীবির। বিভিন্ন ধরনের দেওয়ানি এবং ফৌজদারি মামলা ছাড়াও আইনি অধিকার প্রাপ্তির জন্য আমাদেরকে একজন আইনজীবীর শরণাপন্ন হতে হয়। যিনি তার মক্কেলের পক্ষে আদালতে সঠিক বিচার পেতে সহায়তা করেন।

এর মধ্যেও আবার বিভিন্ন ক্যাটাগরি রয়েছে। বড় বড় প্রতিষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা থাকে। কারণ সকল সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট আইন এবং নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। তাইতো একজন ভালো আইনজীবের বেশ কদর রয়েছে। বাংলাদেশের সেরা ১০ পেশার মধ্য এটি অন্যতম। আপনি যদি জানতে চান ২০২৫ সালে কোন পেশা সবচেয়ে ভালো তাহলে এই পেশা সম্পর্কে ভাবতে পারেন।

ওয়েব ডেভেলপার

বর্তমানে সাধারণ ওয়েবসাইটে ডেভলপারদের চাইতে এআই ডেভেলপারদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছেন। এমনকি যদি ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কোন পেশার সবচেয়ে ভালো সেটা জানতে চান তাহলে আমি আপনাকে এআই ডেভেলপার হতে বলব। আপনি নিশ্চয় জানেন কিছুদিন আগেও যে কাজ কঠিন ছিল এআই এর কারণে সেই কাজ এখন অনেক বেশি সহজ হয়ে গিয়েছে। তাইতো এই আইডি ডেভলপারদের চাহিদাও বাড়ছে।

আমাদের শেষ কথা

উপরে উল্লেখিত বাংলাদেশের সেরা ১০ পেশার বাইরেও আরো অসংখ্য পেশা রয়েছে। কিন্তু আপনি কোনটি করতে পছন্দ করেন এবং কোনটি ভাল লাগে সেটি খুঁজে বের করতে হবে। কোন পেশা সবচেয়ে ভালো নির্দিষ্ট কোন উত্তর নেই। একজন ব্যক্তি যে কাজটি সবচাইতে ভালোভাবে করতে পারে এবং করতে পছন্দ করে তার কাছে সেই পেশাই ভালো। তবে ক্যারিয়ারের শুরুর আমরা হাতের কাছে যেটা পাই সেই কাজে লেগে পড়ি। যার কারণে কিছুদিন পরে হতাশ হয়ে পড়ি। কারণ সেই কাজটি হয়তোবা আমাদের মনের মত হয় না। তাই ভেবেচিন্তে এবং কিছুদিন দেরি হলেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিন।

2 thoughts on “বর্তমানে বাংলাদেশের সেরা ১০টি পেশা”

Leave a Reply to Aman ullah ariyan Cancel reply